ধারাবাহিক- জন্মসূত্র (১১)

(সমাজের প্রান্তবর্গীয় দলিত সম্প্রদায়— রুইদাসদের (চর্মকার-মুচি) নিভৃত জীবনদর্শনের চিত্রপট)
জন্মসূত্র
-সুব্রত হালদার

 

[ছাব্বিশ]

বাবুদের সঙ্গে আস্তে আস্তে রতনরা এগিয়ে চলল হৃদারাম ব্যানার্জী লেনের পূজামন্ডপের দিকে। যেতে যেতে রতন ভাবছে, পাঁচ হাজার কেন, দু’হাজার দিলেও তারা রাজি হয়ে যেত। যে দুর্বিসহ অপমান যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে তাদের আসতে হল। কোলকাতার যে কোন পূজামন্ডপে তাদের বায়না পাওয়া অতি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। তাই হয়তো এই বৌবাজারের মোড়ে টানা এত ঘন্টা বাজনা বাজাবার শক্তি মা শীতলা তাদের দিয়েছিল। ফলও হাতে নাতে পেল। না হলে ফাঁকা হাতে বাড়ি ফিরে গেলে পাড়াবাসীর কাছে মরমে মরে যেতে হত। কারোর কারোর কাছে মজার খোরাকও তাদের হতে হত। এতদিন যে রতন, তার ঢাক বাজাবার দক্ষতা নিয়ে গর্ব করতো। ঢাক বাজানোর শিক্ষা নিতে দূর দূর থেকে লোকজন আসতো, পাকা এবং যোগ্য বাজনাদারের কাছে বাজনা বাজানোর তালিম নিতে। এই নিয়ে পাড়ার অন্য বাজনাদারদের ঈর্ষার কারণও হতে হয়েছে তাকে। সেই রতনের আসল পরীক্ষা হতে চলেছে এবার। নিজেকে বলছে, “রতন তুই যদি সত্যি সত্যি দেখিয়ে দিতে পারিস তোর ঢাক বাজানোর কেরামতি তো তোর এ জীবন সার্থক হবে রে। ‘ঘরে মধসূদন আর বিদেশে মোদো’ হওয়ার থেকে উল্টোটা হলেই তবে সমাজে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবি! এই দেখ না, এতদিন তো তুই এলাকায় ভালো ঢাক বাজানদার হিসেবে এবং প্রশিক্ষক হিসেবে নাম করে এসেছিস। তাতে তোর কি লাভ হয়েছে? কিচ্ছু না। উল্টে পড়শির ব্যাঁকা চোখ তোর ওপর আছড়ে পড়েছে। শত্রু বেড়েছে। নিষ্কর্মারা তোর বদনাম ছড়িয়ে এসেছে। তুই শুধু শুনে এসেছিস। কিচ্ছু করতে পারিসনি তাদের। এবার কোলকাতায় নাম ফাটিয়ে পাড়ায় দেখিয়ে দে রতন রতনে আছে। আসল রতনরা এই রতনকে চিনে নিয়েছে। তাদের বিচারের কষ্ঠিপাথরে গ্রামের রতন পাশ করে গেছে।”
বউবাজারের মোড়ে প্রথম যে বাবু তাদের সঙ্গে কথা বলেছিল সেই বাবুই এই পুজো কমিটির সভাপতি। সভাপতি সন্তোষবাবু প্যান্ডেল লাগোয়া এক বাড়ির বৈঠকখানা সংলগ্ন একটা ঘরে তাদের ক’দিনের জন্যে থাকার ব্যবস্থা করেছে। ওই ঘরের সঙ্গেই বাথরুম চানের ঘর আছে। শহরের ব্যাপার। গ্রামের মত বাইরে কোথাও বাথরুম পায়খানা করতে হবে না। প্রথম প্রথম একটু
অস্বস্তি হচ্ছিল ওদের। কোনদিন তো এমন সুন্দর পরিস্কার ঘেরা ঘরে বাথরুম করেনি। সন্তোষবাবু তাদের বাপ বেটার নাম জেনে নিয়েছে। ছেলের সম্বন্ধে টুকটাক জেনেও নিয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক পড়ছে, এবার ফাইনাল দেবে। শুনে তো শুধু সন্তোষবাবু কেন, পাড়ার যে শুনেছে সনাতনকে তারিফ করেছে। তারপর রতন থাকতে না পেরে যখন বলেছে, মাধ্যমিকে ও স্টার পেয়েছে! ওকে নিয়ে যে কি সুখ্যাতি করলো ওরা! সনাতন তো বাপের ওপর ক্ষেপে লাল, “তুমি ওসব কথা ওনাদের বলতে গেলে কেন? কথাটা কি লোককে বলার জন্যে পেটের ভেতর ভুটভাট করছিল? আমরা ঢাক বাজাতে এসেছি বাজিয়ে চলে যাবো। এমনি টুকটাক নাম ঠিকানা জানিয়ে দেওয়া দরকার, বলে দেওয়া হল, এই পর্যন্ত। বেশি খোলের খবর না বলাই ভাল। তারপর কে কিভাবে নেবে বলা যায় না তো। যা বলেছো, বলেছো। আর বলবে না বাবা। নিজেদের এতটা হাট করে দেওয়া মনে হয় ঠিক না।” ছেলে বকুনি দিয়েছে ঠিক আছে। তাতে সে কিছু মনে করেনি। ছেলের সুকর্মের কথা বাপ-মা তো আগে মানুষকে জানিয়ে ভেতরের আনন্দকে বাঁচিয়ে তোলে।
সন্তোষবাবু বলল, “রতন, তোমরা পরিষ্কার হয়ে টিফিন সেরে নাও। তোমাদের টিফিন এসে গেছে। তারপর আটটায় পাড়ার সকলকে আসতে বলেছি। তোমাদের আগমনীর বাজনা শোনার জন্যে। মায়ের পুজোর ব্যস্ততা তো কাল, ষষ্ঠী থেকে শুরু হবে। প্রস্তুতি সব শেষ। এখন সবাই বিশ্রামে। কোন কাজ নেই। তাই এই সময়টা তোমার বাজনা শুনে কাটাতে চাই। এই প্রথম আমরা তোমাদের হাত ধরে ঢাকের বাজনার মাধ্যমে আগমনীর সুর, তাল, লয় উপভোগ করবো। এবার তোমার হাতের কেরামতি।”
পঞ্চমীতে আগমনী, ষষ্ঠীর কলাবৌ চান, মা দূর্গার বোধন, সপ্তমী-অষ্টমী নবমীর পূজার্চনার বাজনা, আরতির বাজনা, সন্ধ্যারতির বাজনা। নবমীতে কুমড়ো বলির বাজনার তাল। একে একে বাজনার কেরামতিতে হৃদারাম ব্যানার্জী লেনকে মাতিয়ে তুলল রতন-সনাতন। কত দিন, কত বছর পর যেন এই পুজোমন্ডপে আনন্দের জোয়ারে নতুন পালক জুড়ে গেল এই দুই বাপ-বেটার হাত ধরে।
নবমীতে মা’কে বলি উৎসর্গ করা শাস্ত্রের বিধান। কিন্তু কোথাও মাথার দিব্যি দিয়ে লেখা নেই যে মা’কে পাঁঠাবলি দিয়ে সেই বলি দেওয়া পাঁঠার রক্ত দিয়ে মায়ের পা ধুইয়ে দিতে হবে। অনেক পুজো প্যান্ডেলে এই পাঁঠাবলি প্রথা এখনো চালু আছে। রতনের একটা ভয় ছিল এবং সে আতঙ্কিতও ছিল যে এই হৃদারাম ব্যানার্জী লেনের পুজো কমিটি আবার পাঁঠাবলির জবরদস্ত পক্ষপাতি নয়তো? রতন পাঁঠাবলি প্রথার ঘোর বিরোধী। প্রতিবাদে সে পাঁঠাবলি তালের বাজনা জানলেও বলে তার জানা নেই। সে শেখেনি। মায়ের সন্তান যেমন জীব হিসেবে রক্তমাংসের মানুষ, ঠিক তেমনই জীব, ছাগ-পাঁঠা ! ছাগ-পাঁঠার রক্তে পদযুগল স্নান করালে যদি মা তুষ্ট হয় তো তাহলে মানুষের রক্তেও তো পদযুগল স্নান করালে মা তুষ্ট হবে! ছাগের বদলে মানুষ ওই নিষ্ঠুর কাপালিক বা তন্ত্র সাধক-সাধিকার মত মানুষের রক্তে পদযুগল স্নান করবে না কেন? অনেক জায়গায় প্রতিবাদ করেছে রতন। তাদের পাড়াতেও এই নিয়ে প্রচন্ড বিবাদ হয়েছে। কোথাও কোথাও সে জিতেছে। কোথাও কোথাও আবার গোঁড়াদের আধিক্যে তাকে পিছু হঠতে হয়েছে। এতদিনে এই বাবুদের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে একটা নিবিড় সু-সম্পর্ক গড়ে উঠছে তাদের। নবমীর বলি প্রসঙ্গ এলে সেই তাল কেটে যাবে না তো! তাল কাটার ভাবনায় অষ্টমীর গভীর রাতে শুতে যাবার সময় থেকে দুশ্চিন্তা তাকে যেন গ্রাস করতে শুরু করে! কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না। ঘুম এলই না রাতে। ভোর থাকতে উঠে পড়ে চানটান করে ঘরের বারান্দায় দাঁড়ায় সে। কমিটির বাবুদের যাকে সে প্রথম দেখবে তাকে জিজ্ঞেস করবে, এখানকার প্রথা কি? কি বলি দেওয়া হয় নবমীর সকালে মায়ের কাছে? যদি পাঁঠার কথা তোলে তো তাহলে সে সঙ্গে সঙ্গে দু’হাত তুলে দাঁড়িয়ে যাবে। পাঁঠা বলির বাজনা তার জানা নেই। তাছাড়া পাঁঠাবলির সে কঠোর বিরোধী। সেইজন্যেই সে শেখেনি এই পাঁঠাবলি বাজনার তাল।
হাতের গলাসিতে ফোস্কা তো সনাতনের পড়েছিল বৌবাজারের ফুটপাথে একটানা বাজাবার সময়। সেই ফোস্কা থেকে রক্ত পড়তে শুরু করে ওইদিন সন্ধ্যায় আবার বাজাবার সময়। সনাতনের হাতের যন্ত্রণার অভিঘাত তার মুখে ফুটে উঠছিল। তা চোখ এড়াতে পারলো না সন্তোষবাবুর! বাজনা কিছুক্ষণের জন্যে বন্ধ রাখার কথা বলল বাবু। তারপর বাবু বলল, “আমরা এখন চা খাবার বিরতি নিচ্ছি। আমরা সব্বাই এখন চা খাব। রতনরাও খাবে।” বলে বাবু
সনাতনকে ঘরের ভেতরে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তোমার কি কোন কষ্ট হচ্ছিল, খোকা? তোমার মুখের ভাব দেখে মনে হচ্ছিল তোমার কোন অসুবিধা হচ্ছিল।” কিঞ্চিৎ ইতস্তত করে রতন বলল, “হ্যাঁ, ওর আঙুলের গলাসিতে ফোস্কা পড়েছে। আসলে টানা চারঘন্টা ও কোনদিন কাঁসর বাজায়নি। ভারি কাজকর্ম করারও তেমন অভ্যেস নেই। লেখাপড়ার হাত। নরম। তাই আরকি।” এবার বাবু বলল, “দেখি তোমার হাত! কোথায় ফোস্কা পড়েছে!” সনাতন হাতটা দেখাতে চমকে ওঠে বাবু,“আরে খোকা! এখান দিয়ে তো রক্ত চুঁইয়ে আসছে! এক্ষুণি এর ট্রিটমেন্ট করা দরকার। না হলে ঘা হয়ে যাবে। তারপর এতদিন তোকে কাজ করতে হবে। হেলাফেলা করলে হবে না।” বলে পাশের একজনকে বলল, “প্রতোষকে দেখছি না। কোথায় গেল দেখ তো? মনে হয় ঘরে গেছে। গিয়ে বল এই ছেলেটার আঙুলের গলাসিতে ফোসকা পড়ে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে। আর তোমাকে দাদা ডাকছে। এক্ষুণি চলে এসো।” খবর পেয়ে প্রতোষ সঙ্গে সঙ্গে এসে সনাতনকে দেখে প্রেস্ক্রিপসান করে একজনকে ওষুধ নিয়ে আসতে বলে বলল,“তুই এগুলো কিনে নিয়ে আয়। তারপর আমি যা করার করছি।”
এদিকে ওষুধ এসে গেল এবং ডাক্তারবাবুও খবর পেয়ে ফিরে এলো। ডাক্তারবাবু আসতে সন্তোষবাবু রতনকে বলল,“প্রতোষ আমার ছোট ভাই। ডাক্তার। বিদেশে থাকে। প্রত্যেক দূর্গা পূজায় ওরা সপরিবারে কোলকাতায় চলে আসে। কোলকাতার আনন্দ তো বিদেশে বসে সম্ভব নয়। প্রতোষের মত বাইরে যে যেখানে থাকে এইসময় সবারই নিজের নিজের জন্মভূমিতে ফিরে আসার জন্যে মন আনচান করতে থাকে।” ডাক্তারবাবু সনাতনের ক্ষতটা দেখে মলম দিয়ে ভাল করে ব্যান্ডেজ করে দিল। আর দু’ধরণের ওষুধ দিল। দু’বেলা একটা করে খাবার জন্যে। সেই সঙ্গে একটা অম্বলের বড়ি খেতে দিল। বলল,“তিনদিনে এটা শুকিয়ে যাবে। এখানে যাতে জল না লাগে দেখবে। তোমরা তো এখন এখানে থাকবে। তিনদিন পর ব্যান্ডেজ খুলে ড্রেসিং করে আবার ব্যান্ডেজ করে দেবো। আর কোন অসুবিধা হবে না।” ডাক্তারের কাজ হয়ে গেলে সন্তোষবাবু বলল, “রতন, আজ আর বাজাতে হবে না থাক। ছেলেটা কষ্ট পাবে।” সঙ্গে সঙ্গে সনাতন বলল, “না, আমি পারব।” কাঁসর বাজানো কাঠিটা নিয়ে বলল, “এইতো আমি বাজাতে পারছি। কোন অসুবিধা হচ্ছে না। লাগছেও না। আস্তে আস্তে, সাবধানে না হয় বাজাবো। তবে বাজনা থামানো যাবে না। এত গুনিজন মানুষ মন দিয়ে আমাদের বাজনা শুনছে। এনাদের হতাশ আমি কিছুতেই করতে পারবো না। বরং আমাদের সৌভাগ্য, আমাদের বাজনা শোনার জন্যে ওনারা মূল্যবান সমন নষ্ট করে এখানে এসেছেন। সন্তোষবাবু, আপনি ‘না’ করবেন না। আর যদি অসুবিধা সত্যিই হয়, আমি জোর করে বাজাবো না। এই কথাটা আমি আপনাকে দিচ্ছি বাবু।” এত সুন্দর কথাটা বলল সনাতন, সন্তোষবাবু আর কিছু বলতে পারলো না। শুধু বলল,“তুই ছেলে তো দেখছি বাবার মত ভালো কথা বলতে পারিস। এতক্ষণ চুপচাপ ছিলিস, বুঝতে পারছিলাম না। ভেতরের জমি উর্বর বলেই না মাধ্যমিকে অত ভাল রেজাল্ট করতে পেরেছিস। তা সে ছেলে ভাল কথা বলতে পারবে না তা হয় না।”
কথাটা জেনে রতন প্রচন্ড আনন্দ পেয়েছিল। এত আনন্দ জীবনে কোনদিন সে পেয়েছিল কিনা তার মনে নেই। কমিটির লোক যখন বলল, “আমাদের এখানে নবমীতে পশুবলি কোনদিন হয়নি। আমাদের পূর্বপুরুষরা সেই কত যুগ আগে থেকেই এই রক্তস্নানে বিশ্বাস করেনি। সেই রেওয়াজ এখনো চলে আসছে। ওই কুমড়ো বলি দিয়ে শাস্ত্রের বিধান আমরা অনুসরণ করে আসছি।” খুশিতে টগবগ মনে সঙ্গে সঙ্গে রতন মুখ থেকে বের করে ফেলল, “বলির পর্বে আমি এমন বাজনার তাল তুলবো, তা সকল মানুষ আনন্দে আত্মহারা হবার মতো হয়ে যাবে। দেখে নিও বাবু!” রতন যা বলেছিল তাই যেন করে দেখালো! পশু বলির ‘না’ যেন অন্য মানুষে উত্তরণ ঘটিয়েছিল রতনকে। কুশলী রতনের ঢাকের বোল এমনভাবে হৃদয়কে উদ্বেল করে তুলতে পারে তা পাড়ার মানুষরা যেন ভাবতেই পারছিল না। নৃত্যের তাল। তাও আবার ঢাক-কাঁসরে! সে তো উদ্দাম নৃত্যের মত হয় জানত এরা। কিন্তু এই তালের এমন গুনমুগ্ধ বোল হৃদয়ের ভেতর থেকে নৃত্যের অনুরণন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। চলৎশক্তিহীন শ্রোতারাও যেন হৃদয় উচ্ছ্বাসে থেকে নেচে উঠছে। অথচ উদ্দামতার লক্ষণ ছিটেফোঁটা নেই ! পাড়ার মেয়ে বউরা- যাদের কোনদিন বিসর্জনেও নৃত্যের তালে তাল দিতে পারা যায়নি, সেইসব রমনীরাও বোলের তালে তাল মেলাতে শুরু করে। উৎসাহিত কিছু যুবতীরা সন্তুষ্ট হয়ে রতনকে দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে কিছু কিছু করে নগদ টাকা দিয়ে এই আনন্দযজ্ঞে নিজেদের সামিল করে নেয়।
নবমীর সকাল থেকে শুরু। সবকিছু সেরেসুরে রতনরা যখন শুতে যাচ্ছে তখন রাত দেড়টা। ক্লান্ত শরীর। রতনের মনে হচ্ছে শুয়ে পড়লেই ঘুমিয়ে কাদা হয়ে যাবে। ছেলেকে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে বলে নিজেও শুয়ে পড়ল। চোখ বুজিয়ে চুপচাপ রয়ে গেল। কতক্ষণ যেন হয়ে গেল ! তবু পোড়া চোখে ঘুম নেই। এবার দু’হাত উল্টে বালিশের উপর রেখে তার উপর ঠেকনা দেয় মাথা। ক্লান্তি যদি ঘুমকে কাছে ডেকে নেয়। নাহ! তবু ‘ড্যাব ড্যাবে’ চোখ দুটো। কড়িকাঠে নিবদ্ধ তার দৃষ্টি। রাত পোহালেই দশমীর বিসর্জনের আবহ। চরাচরে আসন্ন বিষাদের ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে শুরু করবে। সেই ভাবনায় রতনের মনটা যেন কেমন মুষড়ে যায়! এ’কদিনের খুশির উচ্ছ্বাস আনন্দর প্রবাহ এই বিজয়ার হাত ধরে বিদায় নেবে। অপেক্ষা করতে হবে আবার আসছে বছরের জন্যে। কিন্তু এই বাবুরা পরের বছর তাদের বায়না দেবে কি না তা তো অজানা। নাও দিতে পারে। ফি বছর তাদের মত কত ঢাকি আসে, ঢাকে বোল তুলে বাবুদের সন্তুষ্ট করে চলে যায়। এই পুজো প্যান্ডেলে আগের বছর যারা ঢাক বাজিয়ে গেছে তাহলে তাদেরই তো বাবুরা আবার এই বছর আসতে বলতে পারতো। তা তো হয়নি। তাই তাদের বেলাই বা হবে এমন জোর দিয়ে সে বলতে পারে না। তবে এই প্যান্ডেলে তারা যেমন ঢাকে কাঠি মেরে বোল ফোটানোর পটুত্ব দেখিয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়েছে। তারাও যারপরনাই আনন্দ পেয়েছে, খুশি হয়েছে। ঢাক বাজিয়ে এমন আনন্দ এই গড়ান বয়সে এসেও আগে কোনদিন পায়নি, রতন। মনে হচ্ছে যেন এখানকার প্রতি তার একটা অধিকার জন্মে গেছে। এখানকার মানুষের আচার ব্যবহার, তাদের প্রতি এনাদের ভালবাসা আর স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গী এই ধারণাকে যেন দৃঢ় করেছে। না, তাই বলে সে তার অধিকার ফলাতে সচেষ্ট হবে না। যা স্বাভাবিক, যেটা হবার সেটাকেই সে মেনে নেবে। আরও একটা দিন তাদের হাতে আছে। সুযোগ আছে রতনের কাছে, তার সর্বস্ব উজাড় করে দেবার। তারপর সবকিছু সে সময়ের হাতে সমর্পন করে দিতে চায়। যেমনটি শিয়ালদার সমাজবিরোধী, হাতকাটা ছেনোর হাতে অপমানিত, বিধ্বস্ত হয়ে ভাগ্যকে ভাসিয়ে দিয়েছিল দিগন্তমুখী সময় প্রবাহে।
দশমীর সকাল। বিসর্জন পুজোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। বামুনঠাকুররা আর বাসহরিজনেরা ব্যস্ত। পাড়ার কচিকাঁচারা ইতিউতি ছুটোছুটি আর আনন্দে মশগুল। সনাতনের সঙ্গে এদের ভালই ভাব জমে গেছে। এক একজন কচি এসে আব্দার করে, “ও সনাতন দাদা, আমাকে একটু কাঁসর বাজানো শেখাবে? তুমি কি সুন্দর কাঁসর বাজাও। আমার শুনতে খুব ভাল লাগে। ঠিক ওইরকম বাজনা আমাকে শেখাতে হবে কিন্তু।” সনাতনও কচিদের সঙ্গে কচি হয়ে যায়। আর একটু বড়রা আব্দার করে, রতনকে, ঢাক বাজাতে দিতে হবে। রতন তাতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করে না। ওরা কি আর ঢাকে বোল তুলতে পারে? ওরা ওদের মত ঢাকে কাঠি মারে। ও বোলে কোন তাল ওঠে না। কাটা তাল ভেসে বেড়ায়। তাদের সঙ্গে এমন কান্ড ছেলেপিলেরা করছে অনেকক্ষণ থেকে। বড়দের চোখ পড়তেই বড়ড়া হাঁই হাঁই করে ওঠে, “এই তোরা এমন উল্টোপাল্টা ঢাকে কাঠি পেটাচ্ছিপ, ঢাক তো ছিঁড়ে ঢপ ঢপ করবে রে শেষ পর্যন্ত। তখন রতনকাকু আর বিসর্জনের, ভাসানের বাজনা বাজাতে পারবে না। সব কেঁচোগন্ডুস হয়ে যাবে। আচ্ছা রতন। তোমরাও তো তেমন। কাজের জিনিস এমন অকেজোদের হাতে দিতে আছে? অকাজ কিছু হয়ে গেলে আমরাও তো আতান্তরে পড়ে যাবো !” মুচকি হেসে রতন বলল,“কাঠি দিয়ে ঢাকে আঘাত করে ঢাক ফাঁসানো যায় না বাবু। এই কাঠি দিয়ে আপনি যত খুশি একে আঘাত করুন এ খিলখিল করে শুধু হাসতেই থাকবে। গোমড়ামুখো এ একদম হবে না।”
বাঃ, তুমি বেশ কথা বললে তো রতন। মনে ধরার মত কথা তোমার। তা আমাকে একটু তোমার ঢাক বাজানো শেখাও না? আমি পারবো না, না ? ঢাকে তোমার মত অত সুন্দর বোল তুলতে?” রতন মুচকি হাসছে দেখে বাবু বলল, “হাসছো যে রতন? আমি পারবো না বলছো।”
-না বাবু। সেকথা আমি বলতে পারি! আপনারা অত বড় মাপের মানুষ। অত শিক্ষিত। আমরা এই মূর্খরা পারলে আপনারা পারবেন না, এতবড় হেলাফেলা কথা আমি বলতে পারি! বলছি আপনারা এই সব ছোটমোটো কাজ করতে যাবেন কেন। এ কাজ আমাদের মত নীচু ঘরের লোকেদের কাজ। হাসির মাধ্যমে সেই কথাই আমি বলতে চাইছিলাম বাবু।
-তুমি মোটেই নীচু ঘরের নও। দুটো কাঠি দিয়ে যারা এত মনমাতানো বোল তুলে মাতৃমন্দির জাগিয়ে তোলে তারা কক্ষনো ছোট-বড়ো বিচারের আওতায় আসে না। শিল্পের জন্য শিল্পী। শিল্প ভগবানের হৃদয় মথিত কলা। এরা উঁচুনীচু সবার ঊর্দ্ধে। ওসব কথার মারপ্যাঁচ ছাড়ো। আমাকে একটু দেখাও তো, কেমন করে ঢাকে বোল তোলো তোমরা?
নবমী শেষ মানে মায়ের আরাধনার যাবতীয় মূল পর্ব প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাই কর্মকর্তারা সবাই প্রায় অনেকটা হাল্কা মেজাজে। একজন বাবুর কথা শুনে এদিক ওদিক থাকা অন্য বাবুরাও রতনকে ঘিরে ধরে ঢাক বাজানোর তালিম দেবার জন্যে। এমনকি সন্তোষবাবুও। সন্তোষবাবুকে দেখে রতন যেন আরও ভড়কে যায়। যদি সে এমন বড়বড় বাবুদের শেখাতে না পারে তাহলে তো সে মরমে মরে যাবে। ইতস্তত করছে রতন। বাবার মনের অবস্থা বুঝতে দেরি হয়নি সনাতনের। বাবাকে স্বাভাবিক করার জন্যে বলল,“বাবা, বাবুরা যখন বলছে তখন একটু না হয় দেখিয়ে দাওনা। বাবুরা টুকটাক বাজাতে পারলেই খুশি হবেন।” সঙ্গে সঙ্গে সন্তোষবাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে আবার সনাতন বলল,“বাবা কিন্তু ঢাক বাজানো শেখানোর মাস্টার। আমাদের ওদিককার বহু দূর দূর থেকে মানুষ আসে বাবার কাছে ঢাক বাজানো শিখতে। বাবা চাইলে আপনাদেরও শেখাতে পারবে।” সনাতনের কথা শুনে এবার বাবুরা আর কিছুতেই রতনকে ছাড়বে না। কিছুটা অন্তত শেখাতে হবে তাদের।
আর কোন উপায় না দেখে রতন বলল, “বাবুরা, ঢাক বাজানো শিখতে গেলে ওই গানবাজনার তাল, লয়, বোল ইত্যাদি সম্বন্ধে প্রাথমিক কিছু নিয়ম জানা দরকার। না হলে একটু পরেই আবার ভুলে যাবে। যেমন ছেলেপুলেদের গান বা তবলা শেখার সময় এই নিয়মগুলো শিখতে হয়।” সঙ্গে সঙ্গে বাবুরা বলল,“ঠিক আছে আমরা রাজি। তুমি শুধু ঢাক বাজানো শেখার জন্যে যে তাল, লয়, বোল-টোলগুলো প্রয়োজন সেগুলো শেখাও। আমরা মন দিয়ে শিখবো।”

[সাতাশ]

নতুন নক্সার কাজে পারদর্শিতা দেখিয়ে বড়বাজারে মহাজন মহলে অখিলের কদর এখন দেখার মত। সেই সুনামের হাত ধরে একাধিক মহাজনের ঘরে এখন তার মালের চাহিদা তুঙ্গে। একবার সে তার তৈরী জিনিস নিয়ে যে ঘরে ঢুকবে, সেখান থেকে তাকে খালি হাতেই ফিরতে হবে। অন্য ঘরে দেবার মত মাল আর তার কাছে অবশিষ্ট থাকবে না। এই নতুন নক্সার গয়না নেবার জন্যে অনেকে আবার আগাম টাকা নেবার জন্যে ওকে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু অখিল তাতে রাজি হয় না। আগে থেকে কেউ তাকে কিনে রেখে দেবে সেটা তার নীতিবিরুদ্ধ। গুরু, মোহন গোড়ে এই বিদ্যে অনেক আগেই তাকে শিখিয়ে দিয়েছে। আর বাকির কারবারও সে কোনদিন করে না। তাতে তার জিনিস যদি বিক্রি নাও হয় তবু। তবে এমন পরিস্থিতির মধ্যে তাকে বা তার গুরুকে কোনদিন পড়তে হয়নি। বাজারে এ জিনিসের চাহিদা সবসময়। মাঝে মাঝে কারবারে ভাটার টান যে আসে না তা নয়। যদিও তা খুব কম সময়ই হয়েছে। তখন দাম ধরে না থেকে লাভ কম করে ছেড়ে দিলে কাটান হয়ে যায়।
অখিলের এই নব-উত্থানের মূল নেপথ্যচারি কিন্তু সেই রেখা বউ। তার দক্ষতা এবং পারদর্শিতাতেই এমন উন্নতি। রেখা বউ যদি জটিল নক্সার কাজটা সঠিকভাবে ধরতে না পারতো তো তার পক্ষে এই সুনাম অধরাই থেকে যেতো। অখিল তো শুধু ড্রয়ইং দিয়েই খালাস। অবশ্য রেখা বউয়ের এই কাজের সঙ্গে ও মাঝে মাঝে তার এতদিনে এই লাইনের অর্জিত অভিজ্ঞতার কিছুটা অংশীদার হয়েছে মাত্র। কিন্তু তাকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্যে যে সূক্ষ্ম দক্ষতা অর্জন করা দরকার তা আয়ত্ত করতে সক্ষম হয় রেখা বউ। নিজে নিজে সে কি করে যে এমনটা করতে পারল তা ভেবে মনে মনে গর্ব বোধ করে ও। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর একাগ্রতা ছাড়া যে এসব সম্ভব নয় তা জলের মত পরিষ্কার। অখিল বুঝে গেছে, সেটা রেখা বউয়ের মধ্যে পুরোপুরি বর্তমান। মেয়েরা সঠিক জায়গা পেলে কত জটিল কাজই না উতরে দিতে পারে এই সমাজের। অথচ আমাদের পুরুষ সমাজ, তা অত সহজে করতে দিতে রাজি নয়। তাদের এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে একটা বেড়া রচনা করতে তারা যেন সবসময় সযত্ন থাকে।
আশপাশের কয়েকটা গ্রাম জুড়ে আছে অখিলের মহিলা কারিগর। চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে ও চেষ্টা করছিল এই দামি কাজগুলো অন্যদের দিয়েও যদি করানো যায়। কিন্তু বলা যেতে পারে ষোল আনার মধ্যে পনেরো আনাই অকর্মার ঢেঁকি! অত জটিল কাজের মধ্যে তারা ঢুকতেই চায় না! চেষ্টা করলে হয়তো তারা পারতো। কিন্তু সেই চেষ্টাতেই তারা মাথা চালাতে রাজি নয়।
ঘরসংসার, ছানাপোনা সামলে ওই মোটা বুদ্ধি খাটিয়ে উপর উপর যেটুকু কাজ চালানোর মত কাজ করা যায় তাতেই ওরা পড়ে থাকতে পছন্দ করে। উপরে উঠতে চায় না। নিজেকে মেলে ধরার জায়গা পেলেও আবার সবাই সেই জায়গায় পা রাখতে আগ্রহ দেখায় না। এইভাবেই ওরা নিজেদের পাওনা সুযোগ নষ্ট করে চলে। আর আধিপত্যবাদিরা সেই অনিহার সুযোগ নিয়ে যায় দিনের পর দিন। প্রকারান্তরে হয় কি, যারা সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে জবরদখল করা জায়গা উদ্ধার করতে। এই নিষ্কর্মারাও তখন চায় না তাদের গোত্রের অন্য কেউ ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাক। তখন লিঙ্গ ভেদে যৌথভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে সক্ষমদের এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে।
গুটিকয় সক্ষমদের মধ্যে রেখা বউয়ের উপর অক্ষমদের নিন্দামন্দের ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে সব থেকে বেশি। কেননা এই বউটাই তো তাদের অক্ষমতার ছবি সকলের সামনে তুলে ধরেছে তার যোগ্যতার সঠিক পরিচয় দেবার মাধ্যমে। অখিল প্রতি পদে পদে সকল কারিগরদের রেখা বউয়ের উদাহরণ দিয়ে চলেছে, “ওই একটা অল্পবয়সী মেয়ে যদি এত বৈচিত্রময় কাজ এমন সুচারুভাবে করতে পারে, তাহলে তোমরা পারবে না কেন? সে মেয়ে, তোমরাও মেয়ে। আসলে কি জানো তো কাজে যোগ্যতা দেখাবার ইচ্ছে তোমাদের মধ্যে আদৌ নেই। এবার তোমরা এবং রেখা বউরা- একই জাতের কারিগর হয়েও যদি রেখা বউদের নামডাক ছড়িয়ে যায় তখন তোমরাই আবার তাদের সেই সুনামকে মেনে নিতে অবশ্যই কিন্তু কিন্তু করবে। এমনটাই যেন আমাদের সমাজ ব্যবস্থার নিয়ম হয়ে গেছে। আমরা যেন সব কাঁকড়া হয়ে যাচ্ছি। হাঁড়িতে কাঁকড়া রাখো। দেখবে কিছু কাঁকড়া হাঁড়ি বেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আবার কিছু কাঁকড়া, নীচ থেকে সেই বাইরে বেরিয়ে যাবার চেষ্টা করা কাঁকড়াদের ঠ্যাং কামড় দিয়ে নীচে টেনে ধরে নামিয়ে দিচ্ছে। যারা উঠবার চেষ্টা করছে তাদের উঠতে দিচ্ছে না। নিজেরাও ওঠার চেষ্টা করছে না।
বড়বাজারে মহাজনদের ঘরে নতুন নক্সার হাত ধরে অখিলের এই সুনাম তার পেশা-গুরু মোহন গোড়েকে গোপন করেনি। গুরুকে টপকে বা আঁধারে রেখে কোন কাজ করা তার ধাতে নেই। তাই সে গুরুকে জানিয়ে বলল, “কাকা, এই নক্সার কাজটা কি আমাদের এই কারখানার কারিগরদের দিয়ে করানোর চেষ্টা করবো? তুমি একবার এদের বলে দেখো না? যদি ওদের কেউ করতে চায় বা পারে তাহলে আমি সেটা দিতে পারি। দরকারে মন্ডল পাড়ার রেখা বউকে আনিয়ে এদের তালিম দেওয়াতে পারি। কাজটা একটু জটিল। তবে একবার ধরে নিতে পারলে আর অসুবিধা হবার কথা না। এতে ভাল পয়সা দিচ্ছে মহাজনরা।”
অখিলের এই নতুন উদ্যোগের কথা মোহন গোড়ের কানে আগেই এসেছিল। ও অপেক্ষায় ছিল, অখিল কখন তাকে ব্যাপারটার কথা জানায়। এমনি সময় তো লোকের কাছে সবসময় আওড়ায়, মোহন গোড়ে আমার গুরু। গুরু গুরু করে বাইরে গুরুভক্তির পরাকাষ্ঠা দেখায়। লোকও তাকে সত্যিকারের শিষ্য বলে ভাবে। পুরাকালে যেমন শিষ্যরা গুরুকে মান্য করে সেই জায়গায় নিজেকে স্থান দিতে চায়। মোহন ভাবে, এই কাজের মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে যাবে অখিলের গুরুভক্তির সার-অসারের মাপ কতটা। মোহন উপযাচক হয়ে তাই কোন কথাই এ ব্যাপারে অখিলের থেকে জানতে চায়নি। ধৈর্য ধরে অপেক্ষায় ছিল। মোহন ভাবছিল, আজকাল তো সমাজে স্বার্থপরের বাড়বাড়ন্ত কহতব্য নয়। আপন স্বার্থের জন্যে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে মানুষ। উপযুক্ত পাত্রের প্রাপ্য স্বীকৃতি দিতে তাদের কার্পণ্যের অন্ত নেই। উল্টে কেমন করে উপকারিকে বদনামের পাঁকে নিমজ্জিত করা যায়, নিয়ত সেই চেষ্টায় সময় ব্যায় করতে পছন্দ করে। ওই জন্যেই তো এক শিষ্য যখন বিদ্যাসাগরের বিপক্ষ কর্মে লিপ্ত, তখন বিদ্যাসাগর মশাই প্রায় এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন, ওরে, তোরা খোঁজ নিয়ে দেখ। নিশ্চয়ই কোন না কোন সময় ওই ব্যক্তি তার কাছ থেকে কোনভাবে উপকৃত হয়েছে। তা না হলে সে আমার বিরুদ্ধাচরণ করতেই পারে না। মনে মনে এমন ভাবনাই মোহনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিন্তু অখিল যখন সেই স্বার্থপরজনের পথে পা না বাড়িয়ে সত্যকাম করে বসল, তখন ছেলেটার প্রতি মোহনের শুধু ভালবাসা নয় ভক্তি-শ্রদ্ধাও করতে ইচ্ছে হল। পুরাণ কথায় বর্ণিত গুরু-শিষ্যের সুসম্পর্কের বাণী নতুন করে যেন এই যুগে সে স্পষ্ট করে দিল। মনে মনে অখিলের আরও উন্নতি কামনা করল। বলল, “অখিল আমার জীবনের সর্বোত্তম পুরষ্কার তুই আজ আমাকে দিলি। কর্মগুরুর প্রতি তোর এই কৃজ্ঞতায় আমি যে কতটা তৃপ্ত হয়েছি তা তোকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। শিষ্যর বিরূপ আচরণে স্বয়ং বিদ্যাসাগর পর্যন্ত আক্ষেপ করেছিলেন। ব্যতিক্রম বাদ দিলে মোটামুটি আমরা তেমনটাই জেনে এসেছি। আর তুইই সেই শিষ্য, যে সেই বদ্ধ ধারণা থেকে আমাকে মুক্ত করলি। এ কথা মুখ ফুটে স্বীকার না করে আমার উপায় ছিল না। তোর মহানুভবতাকে তাহলে ঠিক ঠিক মর্যাদা দেওয়া হয় না। আর একটা কথা, তোর নতুন নকশা কোলকাতার মহাজনের কাছ থেকে আমি পেয়েছি। কিন্তু তোর তো অজানা নয় যে আমাদের এখানে যেসব কারিগর আছে, অমন কম বুদ্ধির কারিগরদের পক্ষে এ নকশা তোলা সম্ভব নয়। ওটা তোর ব্যবস্থাপনায় যারা করছে তারাই করুক। এই শিল্পের কাজে তারা আরও শিক্ষিত হোক। তোর হাত দিয়েই তাদের উত্তরণ ঘটবে। এই দৃঢ় বিশ্বাস আমার আছে। তুই এগিয়ে যা অখিল।”

গুরুর আশীর্বাদ এবং স্বীকারোক্তিতে অখিলের মন যেন আরও চনমনিয়ে উঠল। আরও ভাল কাজ করার প্রেরণা ভেতর থেকে সক্রিয় হতে লাগল। সেই জাগরণের হাত ধরে সে রেখা বউকে নিজের কাজের মধ্যে আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত করতে চাইল। ওর মনের জাগরণ বলছে, এই মেয়েটা যদি তার আরও অনেক কাছের লোক হতে পারতো তো কতই না ভাল হত। কিন্তু সেটা বা কেমন করে সম্ভব। সে তো অন্য ঘরের মানুষ। অন্য ঘরের মানুষকে কেমন করে সে আরও কাছে করে নিতে পারবে। পরস্ত্রীর বেশি কাছাকাছি আসা মানে পরনিন্দা পরচর্চার সঙ্গে নিত্য ঘর করা। তার উপর রেখা বউ আবার বিধবা! এমন যে জন, তার নামে নিন্দামন্দ কথা তো আগুনের ফুলকির মত এদিক সেদিক ছড়িয়ে পড়তে সময় নেবার কথা না। গ্রাম-পাড়াগাঁয়ে এমনটা প্রচার বাস্তব সত্য। কিন্তু এই নিন্দামন্দর ভয়ে রেখা বউয়ের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবধান আগের মত বজায় রাখলে তো তার আর চলবে না। তার নিজের স্বার্থে, তার কারবারের স্বার্থে সে এটা হতে দিতে পারে না। সে যতটা তাকে কাছে টানতে পারবে উভয়ের জন্যে ততটাই মঙ্গল।
এমন এক দ্বন্দ্বময় পরিস্থিতির মধ্যে ‘না ফেরার দেশে’ চলে গেল রেখা বউয়ের বিছানা-শয্যা শ্বশুর! আবার এক বিপর্যয় রেখা বউয়ের জীবনের সঙ্গী হয়ে গেল। হয়তো তা একদিন- ‘আজ না হয় কাল’ তাদের জীবনে আসতে চলেছে তা এদের সকলের জানা ছিল। মনকে সেই বোধ দিয়ে মানসিক ধাক্কাটা হয়তো তেমন প্রচন্ডভাবে আসতে দেয়নি। কিন্তু ওটাকে সহনের পরেও অন্যসব সামাজিক এবং আর্থিক ধাক্কা- অন্যতম বিপর্যয় থেকে কম কি! কেমন করে সে এই ধাক্কাকে সামাল দেবে! জাগতিক স্তরে এই ধাক্কা সামলানোও তো তার পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার। সেই উপলব্ধি রেখা বউ ছাড়া আর কে করতে পারে। একমাত্র পারে সেই মানুষটা যে তার মরমে প্রবেশ করতে পেরেছে। সংবাদটা পাওয়ামাত্র অখিল দৌড়ে আসে রেখা বউয়ের বাড়িতে। উদ্ভ্রান্ত রেখার শাশুড়িকে আশ্বস্ত করে অখিল বলল,“কাকিমা, তোমাদের কোন চিন্তা করতে হবে না। তুমি কেন ধরে নিচ্ছো না যে তোমার ভীষ্ম নেই তো কি। তোমার অখিল আছে তো! অজানা দেশে চলে যাওয়া তোমার ভীষ্মর ফাঁকা হয়ে যাওয়া জায়গায় এই অখিলকে তুমি বসাতে পারো না কাকিমা?” পরক্ষণেই অখিলের ভেতরে তোলপাড় করতে থাকলো, “তোমার ভীষ্মর ছায়া যদি অখিলের কায়া দিয়ে আড়াল করে দিতে পারো কাকিমা, তাহলে অখিলও বেঁচে থাকার নতুন পথ পেয়ে যায়। ক্রমশ রক্ষণহীন হতে যাওয়া তোমার স্নেহের পুত্রবধূও আর এক নতুন জীবনের স্বাদ গ্রহণ করে নতুনভাবে বাঁচার পথ পায়। তোমরা চাইলে সেই পথ সুগম করার ভার তো আমার।”
জীবনের উপান্তে নতুন সূর্যর মত উদয় হওয়া অখিলের প্রতি পরম কৃতজ্ঞতাবোধ জেগে উঠল ওই প্রাচীন মানুষটার- ভীষ্মর মায়ের। ন্যুয়ে যাওয়া কোমর অখিলের প্রেরণায় যেন তেড়ে উঠে সোজা করার চেষ্টা করতে করতে বৃদ্ধার নোল হয়ে যাওয়া চামড়ার দু’হাত জড়ো হয়ে এল অবলীলায়, “বাবা অখিল, আমারও যাবার ডাক এলো বলে। দেখতে দেখতে কখন যে সে ডাক এসে যাবে তা তো কারোর জানা নেই। তবু সে ডাক যে কেবল সময়ের অপেক্ষা তা তুমি আমি, রেখা-মা সকলের জানা। তারপর কি হবে বাবা আমার এই ভরা যৌবনা লাবণ্যময়ী বৌমার? ওর ওই আগত রক্ষণহীন জীবনকে রক্ষা করবে কে বাবা? যৌবন-লুঠেরাদের লুঠের মাল হয়ে যাবে না কি রে বাবা, আমার মেয়েটা? ওঃ ভাবনায় দেখা ওই দৃশ্য আমি সহ্য করতে পারছি না রে বাবা। বুকটা ধকর ধকর করে চলেছে। একটু জল। রেখা মা তাড়াতাড়ি একটু জল দে না?” রেখা তখন ঘরের বাইরে দাবায় উবু হয়ে বসে দু’হাঁটুর ফাঁকে মুখ গুঁজে সমানে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে। অখিল দৌড়ে গিয়ে মাটির কলসি থেকে এক গ্লাস জল গড়িয়ে নিয়ে বৃদ্ধার থুতনি আলতো করে উঁচুর দিকে তুলে ঢক ঢক করে জল খাইয়ে দিতে রক্ষে হয়। না হলে হয়তো বুড়িটা এখনই দমবন্ধ হয়ে মরে যেত! অখিলের হাতে জল খেয়ে শুকনো ছাতি ভিজিয়ে শান্ত হয় বুড়ি। খানিক চুপ থেকে বলে, “বাঁচালি বাবা এ যাত্রা আমাকে। তুইই পারবি বাবা আমার ডুবতে থাকা সংসারের নৌকো চাগিয়ে তুলতে। হ্যাঁ, যে কথা বলতে বলতে কথার তাল কেটে গেল। তুই তো বাবা এখনো ঘরে বৌমা তুলিসনি। নাই বা হলি তুই আমাদের জাতের। আজকাল আর সেই জাতের জারিজুরি নেই রে বাবা। সে ছিল একসময়। আমাদের জন্মকালে। সে তো কত যুগ, কত কালের প্রলেপে বিলীন। যেটুকু আছে তা একদল দাম্ভিক লোকের ঢেম্নামী ছাড়া আর কিছু না। তার জন্যে হয়তো তোকেই অনেক বাধা বিপত্তি টপকাতে হবে। তবু তুই দেখিস বাবা আমার বৌমাটাকে। এখন রেখা আমার শুধু বৌমা না রে বাবা। ও আমার আবার মেয়েও। যার সম্বন্ধে ও বৌমা সে তো কালের গর্ভে উবে গেছে। এখন সে নেই ‘বৌমা’ও নেই। আছে কেবল আমার মেয়ে, রেখা-মা। আমার শ্বাস থাকতে থাকতে আমি নিজের হাতে আমার মেয়েকে তোর কাঁধে সমর্পন করে যাবো। তুই শুধু সায় দে বাবা। না, এক্ষুণি না। তুই সময় নে। থিতু হয়ে ভাব। জীবনকে কোন খাতে ভাসাবি। তারপর আমাকে এই সুযোগটা করে দিস বাবা। তোর মত আমাকে তাড়াতাড়ি জানাস।”
শ্বশুরের শ্মশান-কাজ সেরে গামুইদের সঙ্গে বাড়ি ফেরার পথে প্রথমে পড়ে অখিলদের রুইদাস পাড়া তারপর রেখাদের মন্ডল পাড়া। রুইদাস পাড়ার মোড়ে আসতে অখিলদের পাড়ার কয়েকজন তাকে এদিকে চলে আসতে ডাকে।

অখিল সেদিকে যাবার ঝোঁক নিতে যাবার কালেই রেখা গলার স্বর একটু বাড়িয়ে বলে, “তুমি এখন ওদিকে যাবে না বাবু। গামুই-আচার শেষ করে তবে বাড়ি ফিরবে। নাহলে গৃহস্থের অমঙ্গল হয়। চলো আগে আমাদের বাড়ি।” অখিল আবার গামুই দলে ভিড়ে যায়। বে-পাড়ার বউটা যে তাদের পাড়ার ছেলেকে যেতে নিষেধ করতে পারে এবং ছেলেটাও যে বউটার কথা শুনে কাজ করবে আর তাদের অবজ্ঞা করবে তা লোকগুলো ভাবতে পারেনি। বউটা ওদের অপমান করলো! হজম করতে পারলো না ব্যাপারটা। অখিল আর বউটার উপর রাগ-বিদ্বেষ উগড়ে উঠল ওদের মধ্যে। ওরা অবাক হল, একটা মেয়েমানুষ তার উপর স্বামীখেকো মহিলার কথা এক বাক্যে মেনে নিল অখিল! তাদের কথার কোন দাম দিল না! এটা অখিল একদম ঠিক কাজ করল না। অখিলও বুঝল, পাড়ার লোকেদের কথা না মানায় তার উপর চাপ আসবে। কেননা ও, ওদের পাড়াকে খুব ভাল করে চেনে। মন্ডল পাড়া বা গ্রামের অন্য পাড়া মনের দিক থেকে যতটা আধুনিক হতে পেরেছে তাদের পাড়া ওদের ধারেকাছে এখনো পৌঁছতে পারেনি। তাই নিত্য তাদের পাড়ায় আচার বিচার জাত বেজাত চর্চা, জাতের নামে নোংরামি- সব সময় লেগে আছে। সব ওই সেকেলে কিছু
মাতব্বরদের মাতব্বরির জন্যে এসব গোঁয়ার্তুমি চলছে। অখিল তাতে চিন্তিত বটে। তবে ভীত নয়। পাড়ার লালচোখের ভয়ে সে সঠিক কাজ থেকে কিছুতেই পিছিয়ে আসবে না। তার বাবা মারা যাবার পর তারা তো কত দিন একবেলা আধবেলা খেয়ে দিন কাটিয়েছে। মায়ের পাশে তখন পাড়ার কেউ কি দাঁড়িয়েছে? নিজের জাত, রুইদাসদের আটচালা এক কুনকে চাল দিয়ে বলেছে যে, এ বেলা তোদের রান্না হয়নি শুনলাম। এই চালটা রাখ। মায়ে পোয়ে ফুটিয়ে ফ্যান-ভাত নুন মেখে খা! বলেনি। নিজের জীবন পাত করে মা সংসারটাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। তাই ও যখন বে-জাতের মানুষ, মোহন গোড়ের সাহায্যে নতুন জীবনের স্বাদ পেল তখন নিজের জাতভাইরা সাহস করে বলতে আসেনি, বেজাতের বাড়িতে তোর কাজ করতে হবে না। তাতে যদি তোরা মায়ে পোয়ে না খেয়ে মরিস তো মর। দেখতাম কত বড় বুকের পাটা তাদের! কথাটা দাঁড়ায় তাহলে যে, বে-জাতের দলে ভিড়ে পয়সা রোজগার করো। তাতে ঠিক আছে। কিন্তু বে-জাতের সঙ্গে মেলামেশা তোমার যাবে না। আজব সব ভাবনা এই সেকেলে গোঁয়ারদের। এই কু-সংস্কার যে এ যুগে অচল, তা তারা মানতে চায় না। আসলে সেই মানের মন তৈরীর শিক্ষা তো তারা কোনদিন পায় নি। সুযোগ আসলেও তারা সেই শিক্ষা নিতে চায়নি। তাহলে যে নিজেদের খবরদারির কারবারে ভাটা পড়ে যাবে। এতদিনের প্রতিপত্তির জায়গা অত সহজে কি কেউ ছেড়ে দিতে চায়। চায় না। সেই জায়গা থেকে
ওদের উচ্ছেদ না করলে ওরা সরবে না। ভাবনাটা মাথায় নিয়ে অখিল রেখা বউয়ের কথা মত তাদের সঙ্গে এগিয়ে গেল। শুরু হ’ল আর এক দ্বন্দ্বময় দিন যাপনের খুঁটিপুজো।
সারা রুইদাস পাড়া চাউর হয়ে গেল মন্ডল পাড়ার ভীষ্ম মন্ডলের বিধবা বউয়ের সঙ্গে জুটে গেছে অবাধ্য অখিলটা। পাড়ার ওই গোঁয়ার লোকগুলোই মুখে মুখে কথাটা ছড়িয়ে দেয়। এমনভাবে বলতে লাগল যে পাড়ার সবাই যাতে অখিলের প্রতি বিদ্বেষ মনোভাব পোষণ করে। রুইদাস পাড়ায় অখিলের মেয়ে কারিগর তো কম নয়। ঘরে বসে তাদের আয় ভালই হয়। এক দুই করে দেখতে দেখতে প্রায় বেশিরভাগ বাড়িতে অখিলের কারিগর আছে। এতে মেয়ে মহল বেশ দোটানায় পড়েছে। তারা তাদের ঠিকাদার মালিকের পক্ষে যাবে না বিপক্ষে। বিপক্ষে গেলে তো রোজগারে টান পড়বে। তখন বাড়ির মদ্দদেরও নফর-চফর ঘুচে যাবে। তাই বেশিরভাগ মেয়েই অখিলের বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে নারাজ। তাছাড়া ও যদি একটা বিধবা অসহায় মেয়েকে সাহায্যই করে। তাতে ওই অকর্মণ্য মদ্দদেরই বা ফাঁকা ঢপঢপে বুক ফাটে কেন? আর ভীষ্ম মন্ডলের বউ তো তার একনম্বর কারিগর। তার হাত ধরে অখিল কারবারে অনেক উন্নতি করেছে। ওই বউটা যে কাজ করে তা তাদেরও দিয়েছিল। তাদের পাড়ার কোন মেয়েই সেই কাজ তুলতে পারেনি। অত সরেস ঘিলু তাদের মাথায় নেই। যেটা ওই ভীষ্ম মন্ডলের বউয়ের আছে। বউটা ওই নতুন কাজটায় ব্যস্ত বলে অন্য সাধারণ নকশার কাজ করার সময় তার হয়ে ওঠে না। সেই কাজগুলো তো তারাই পাচ্ছে। তাদের আয় বাড়ছে। মদ্দদের আয়ের সঙ্গে তাদের রোজগার যোগ হচ্ছে বলেই না সংসারের সকলের নফরানি চফরানির বহর এতটা বেড়েছে। অখিলের পক্ষে তাই শুধু রুইদাস পাড়ার কারিগররা কেন, আশপাশের পাড়া-গাঁয়ের সব কারিগররাও। একটা বুদ্ধিমতী দক্ষ কারিগর, রেখা বউ। পাথরচাপা কপালের গুনে সে আজ বিপদগ্রস্ত, বিপর্যস্ত। ঠিকাদারবাবু যদি এই বিপদে মেয়েটার পাশে দাঁড়ায় তাতে দোষের কি? তার বড় মন বলেই না সে বিপদে এক অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে!
পাড়ার আটচালার গোঁয়ার মুরুব্বিরা কিন্তু যেখানে ছিল সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে। অখিলকে ডেকে সরাসরি কৈফিয়ৎ চেয়েছে, কেন সে পরস্ত্রী বিধবার সঙ্গে মেলামেশা করছে। এতে তাদের জাতকুল বিপন্ন হতে চলেছে। তাই এই নোংরা কাজ তাকে বন্ধ করতে হবে। নচেৎ আটচালার বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।

ক্রমশ…. 

Loading

Leave A Comment